রাস্তার খাবার থেকে কি আপনার টাইফয়েড হতে পারে?

টাইফয়েড জ্বর হল একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ- যা দূষিত খাবার এবং জল পান করার মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। টাইফয়েডের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলা টাইফি মানুষের অন্ত্রে বাস করে এবং শুধুমাত্র তখনই ছড়িয়ে পড়তে পারে যখন সংক্রামিত ব্যক্তি (অথবা কখনও সুস্থ ব্যক্তিরাও) মল বা প্রস্রাবের মাধ্যমে সেই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেন। সেখান থেকে, এটি দূষিত খাবার বা জলের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
টাইফয়েড কীভাবে ছড়ায়?
সাধারণত, যখন কোনও সংক্রামিত ব্যক্তি স্বাস্থ্যবিধি না মেনে খাবার প্রস্তুত করেন তখন ওই খাদ্য এবং পানীয় সালমোনেলা টাইফি দ্বারা দূষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, সংক্রামিত ব্যক্তি হয়তো শৌচাগার ব্যবহার করেছেন, বেরিয়ে হাত ধোননি এবং তারপর অন্যদের জন্য খাবার বা পানীয় তৈরি করেছেন। এভাবেই আপনার খাবারে ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত হতে পারে। অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে, নর্দমার সংস্পর্শে এলে জল দূষিত হতে পারে।
রাস্তার খাবার খাওয়ার ঝুঁকি
বাড়িতে তৈরি খাবার সাধারণত নিরাপদ বলে মনে করা হয়, তবে রাস্তার খাবারে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। যদিও এটি সবসময় সত্যি নয়, কারণ টাইফয়েড বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে, বাড়িতে রান্না করা খাবারের ক্ষেত্রে সাধারণত কঠোর খাদ্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়। অন্যদিকে রাস্তার খাবার কখনও কখনও স্বাস্থ্যবিধির পরোয়া না করেই তৈরি করা হয়। রাস্তার খাবারে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। প্রায়শই, রাস্তার বিক্রেতারা যে জল ব্যবহার করেন- তা শোধন করা হয় না, বা ফোটানো হয় না। এমনকি, নিরাপদ পানীয় জল ব্যবহার হলেও রান্না করার আগে খাবার প্রস্তুতকারীর হাত না ধোয়া থাকতে পারে। আবার কখনও, বাসন ধোয়ার জন্য ব্যবহৃত জলও দূষিত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, রাস্তার খাবার বিক্রেতারা ফুটপাত বা রাস্তার ধারের মতো অপরিচ্ছন্ন স্থানে দোকান চালান। রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের অনেকে তাঁদের খাবার তাকে সাজিয়ে রাখেন। যদিও সাধারণত খাদ্যদ্রব্য সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্যই এ কাজ করা হয়, তবে খোলা তাকে খাবার রাখলে সেখানে মাছি বসতে পারে, যা টাইফয়েডের সম্ভাব্য বাহক।
নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য আমি কী করতে পারি?
সৌভাগ্যবশত, রাস্তার খাবার খাওয়ার সময় টাইফয়েডের ঝুঁকি এড়াতে আমরা কিছু নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে পারি।
1. ঠান্ডা বা হালকা গরম খাবার এড়িয়ে চলুন
নিশ্চিত করুন যে আপনি যে খাবার খাচ্ছেন তা সঠিকভাবে রান্না করা হয়েছে এবং আপনাকে গরম পরিবেশন করা হয়েছে। এমন জায়গা এড়িয়ে চলুন যেখানে খাবার অনেক আগে থেকে রান্না করা হয় এবং পরিবেশন করার আগে ফের গরম করে দেওয়া হয়।
2. কাঁচা ফল এবং শাকসবজি এড়িয়ে চলুন
যে সব ফল এবং শাকসবজি ভালোভাবে না ধুয়ে, কেটে বিক্রি করা হয়- তা থেকে দূরে থাকুন। রান্না করার সময় সেগুলি দূষিত হতে পারে। আপনি যদি ফল খেতে চান, তাহলে কলা এবং কমলালেবুর মতো ফল বেছে নিন যেগুলি খাওয়ার আগে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়।
3. কম রান্না করা খাবার এড়িয়ে চলুন
কাঁচা বা কম রান্না করা ডিম, মাংস এবং মাছ দূষণের ঝুঁকি বহন করে। নিশ্চিত করুন যে আপনাকে যা পরিবেশন করা হচ্ছে- তা যেন টাটকা হয় এবং খুব ভালভাবে রান্না করা হয়ে থাকে।
4. অপরিশোধিত জল পান করা এড়িয়ে চলুন
যেহেতু টাইফয়েড একটি জলবাহিত রোগ যা দূষিত জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাই পরিষ্কার জল পান করা অপরিহার্য। যদি আপনি জলের গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত না থাকেন, তাহলে কেবল ফোটানো বা বোতলজাত জলই পান করুন। নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন আপনি যে খাবার খাচ্ছেন- তা যেন শোধন করা, ফোটানো বা মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।
5. বরফযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন
বরফের কিউব তৈরিতে ব্যবহৃত জল সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে, বরফযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। চা বা কফির মতো গরম পানীয় একটি নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।
6. পাস্তুরিত না করা দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলুন
পাস্তুরিত না করা দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টি, পানীয় এবং খাবার এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে, নিশ্চিত করুন যে ব্যবহৃত দুধটি এমন একটি প্যাকেট থেকে নেওয়া হয়েছে যেখানে লেখা রয়েছে যে সেটি পাস্তুরিত।
7. টিকা নেওয়ার কথা বিবেচনা করুন
যেসব জায়গায় সাধারণত টাইফয়েড জ্বর বেশি হয়, সেখানে টাইফয়েডের টিকা নেওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধের একটি উত্তম উপায়। আপনার জন্য কোন টিকাটি সবচেয়ে উপযুক্ত- তা জানতে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
উপসংহার
রাস্তার খাবার লোভনীয় হতে পারে, তবে এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। যেহেতু দূষিত খাবার এবং জলের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বরের সংক্রমণ ঘটে, তাই আপনি কোথায় এবং কী খাচ্ছেন সে সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। হাত ধোয়া, টাটকা রান্না করা খাবার খাওয়া এবং পরিশোধন করা জল পান করার মতো মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আপনি টাইফয়েড থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারেন। সন্দেহ থাকলে, বাড়িতে রান্না করা খাবার বেছে নেওয়া বা সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না করা হয় এমন জায়গায় খাবার খাওয়া টাইফয়েডের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। টিকা গ্রহণ টাইফয়েডের ঝুঁকি আরও কমিয়ে দেয়। একটু সতর্কতা টাইফয়েড এবং অন্যান্য খাদ্যবাহিত রোগ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে অনেকাংশে সাহায্য করতে পারে।
তথ্যসূত্রাবলী
দাবিত্যাগ: ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের একটি জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ। এই ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি। এটিকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। এখানে প্রদর্শিত চিকিৎসক, চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং গ্রাফিক্স শুধুমাত্র চিত্রণমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। আপনার অবস্থা সম্পর্কে যে কোনও চিকিৎসা পরামর্শ বা প্রশ্ন বা উদ্বেগের জন্য আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।