প্রতিষেধক কী ভাবে টাইফয়েড প্রতিরোধে সাহায্য করে?

সালমোনেলা টাইফি দ্বারা সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ টাইফয়েড ভারতে এখনও জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ। টাইফয়েডের ফলে উচ্চ জ্বর, দুর্বলতা এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে, এমনকী গুরুতর ক্ষেত্রে, এটি প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। যদিও পরম্পরাগতভাবে সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে আসছে, কিন্তু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বৃদ্ধির ফলে চিকিৎসা হয়ে পড়ছে আরও জটিল। পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধির উন্নতি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে অনেকটাই কার্যকরী হতে পারে, কিন্তু রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য টিকা প্রদান সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
টাইফয়েড টিকা কত ধরনের হয়?
ভারতে, দুই ধরণের টাইফয়েড টিকা পাওয়া যায়:
- ভিআই ক্যাপসুলার পলিস্যাকারাইড (ভিআই-পিএস) টিকা
- টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)
ভিআই ক্যাপসুলার পলিস্যাকারাইড (ভিআই-পিএস) টিকা
ভিআই-পিএস টিকাতে এস. টাইফির ভাইরুলেন্স ফ্যাক্টরের একটি বিশুদ্ধ অ্যান্টিজেনিক ভগ্নাংশ থাকে। একবার ডোজ দেওয়া হলে, এই টিকা প্রথম বছরে প্রায় ৬১% সুরক্ষা প্রদান করে, যদিও সময়ের সঙ্গে এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়, যার ফলে প্রতি তিন বছর অন্তর পুনরায় টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এটি শুধুমাত্র ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। সদ্যোজাত শিশুদের ক্ষেত্রে এই টিকা প্রয়োগ করা যাবে না, কারণ এটি তাদের দেহে কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে না।
টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)
এই প্রতিষেধকে, ভিআই-পিএস টিকার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য, ভি-পলিস্যাকারাইড অ্যান্টিজেনগুলিকে বাহক প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ছয় মাস বয়সী শিশুদের এবং ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদেরও দেওয়া যেতে পারে এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে। ভারতের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব থাকা দেশগুলিতে ৬ মাস এবং ২৩ মাস বয়সী শিশুদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) টিসিভি প্রদানের সুপারিশ করে। ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স শিশুদের জন্য ৬ মাস বয়স থেকে নিয়মিত টিকাদানের সময়সূচির সুপারিশ করেছে এবং তারা ৯ মাস বয়স থেকে হাম-যুক্ত টিকার (যেমন এমআর বা এমএমআর) সহ-প্রয়োগের পরামর্শ দেয়। যদি আগে থেকে নাও দেওয়া হয়ে থাকে, ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত টিসিভি দেওয়া যেতে পারে।
প্রতিষেধক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
যদিও উন্নত পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধি টাইফয়েড প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে, তবে তাদের বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। টাইফয়েড জ্বরের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর আশঙ্কার ফলে টিকা নেওয়া অপরিহার্য। বিশেষ করে বর্তমানে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের ক্রমবর্ধমান প্রকোপের কারণে প্রতিষেধকের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ (এএমআর)
টাইফয়েডের চিকিৎসা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে কারণ ব্যাকটেরিয়া আর সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দিচ্ছে না। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এক্সটেনসিভলি ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (এক্সডিআর) টাইফয়েড নামে আরও শক্তিশালী স্ট্রেন আবির্ভূত হয়েছে- যা শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকগুলিকে অকার্যকর করে তুলেছে। এর ফলে মৌখিক ওষুধের চিকিৎসার শেষ বিকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে অ্যাজিথ্রোমাইসিন। তবে, দক্ষিণ এশিয়ায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতিরোধী টাইফয়েডের ঘটনা ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে উচ্চতর ইনজেকশনযোগ্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার না করলে টাইফয়েড শীঘ্রই অনিরাময়যোগ্য হয়ে উঠতে পারে।
টাইফয়েড টিকা কি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে?
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ মোকাবিলা করার সেরা উপায়গুলির মধ্যে একটি হল প্রথমেই টাইফয়েড প্রতিরোধ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টাইফয়েড কমানোর জন্য কার্যকর সমাধান হিসেবে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়ার সুপারিশ করে। টাইফয়েডের সংখ্যা কমিয়ে এনে, এই প্রতিষেধকগুলি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করে, যা কালক্রমে ওষুধ-প্রতিরোধী স্ট্রেনের বিকাশকে বিলম্বিত করে দেয়। জনস্বাস্থ্য কৌশল হিসেবে ব্যাপক টিকাকরণ বড় প্রাদুর্ভাব রোধ করতে পারে, সমাজকে এই রোগের থেকে বাঁচাতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে।
উপসংহার
ভারতে টাইফয়েড এখনও একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণ। তাই টিকাকরণের মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সংক্রমণ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের বিস্তার রোধ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। যদিও পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধির উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে রোগের ঝুঁকি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার জন্য এগুলি যথেষ্ট নাও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স উভয়ের দ্বারা সুপারিশ করা টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা প্রদান করে এবং শিশুদেরও নিশ্চিন্তে দেওয়া যেতে পারে। টিকাকরণের ব্যাপ্তি ও প্রসার বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা টাইফয়েডের আশঙ্কা কমাতে পারি, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং ওষুধ-প্রতিরোধী স্ট্রেনের উত্থান রোধ করতে সাহায্য করতে পারি।
তথ্যসূত্রাবলী
দাবিত্যাগ: ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের একটি জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ। এই ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি। এটিকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। এখানে প্রদর্শিত চিকিৎসক, চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং গ্রাফিক্স শুধুমাত্র চিত্রণমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। আপনার অবস্থা সম্পর্কে যে কোনও চিকিৎসা পরামর্শ বা প্রশ্ন বা উদ্বেগের জন্য আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।