Typhoid Needs Attention

টাইফয়েড কীভাবে ছড়ায় এবং প্রতিটি অভিভাবকের যা জানা উচিত

টাইফয়েড একটি গুরুতর অসুস্থতা যা সকলের শরীরেই প্রভাব ফেলে করে, তবে স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো অনুশীলন না করা এবং দূষিত খাবার ও জলের সংস্পর্শে বেশি আসার ফলে শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। একজন অভিভাবক হিসেবে, এটি কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় এবং কীভাবে আপনার সন্তানদের এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়- তা বুঝে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে, আমরা টাইফয়েড সংক্রমণ, এর প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করব।

টাইফয়েড কীভাবে ছড়ায়?

টাইফয়েড জ্বর সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয়। সাধারণত যখন আমরা দূষিত খাবার বা জল খাই, তখন এটি মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। শরীরের ভিতরে প্রবেশ করার পরে সালমোনেলা সংক্রমণ অন্ত্রের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরীরে আক্রমণ করে। ফলে জ্বর এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়।

আপনার শিশুর টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি কারণ হতে পারে:

  • ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত শৌচাগার ব্যবহার করা এবং তারপরে হাত না ধোয়া r
  • দূষিত জল পান করা
  • রাস্তার অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, বিশেষ করে ঠান্ডা পরিবেশিত খাবার (যেমন ফল, চাট, মিষ্টি বা কিছুক্ষণ ধরে প্রদর্শিত থাকা খাবার)
  • স্থানীয়ভাবে তৈরি আইসক্রিম বা বরফের ‘গোলা’ খাওয়া যা অপরিশোধিত বা দূষিত জল দিয়ে তৈরি হয়ে থাকতে পারে
  • রাস্তার বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিরাপদ নয় এমন আখের রস বা অন্যান্য ফলের রস (বরফ সহ বা ছাড়া) খাওয়া
  • পাস্তুরিত না করা দুধ থেকে তৈরি মিষ্টি এবং খাবার খাওয়া

দীর্ঘস্থায়ী বাহক কারা?

কখনও কখনও, টাইফয়েড থেকে সেরে ওঠার পরেও, কিছু রোগী কোনও লক্ষণ না দেখিয়েই তাঁদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারেন। ‘দীর্ঘস্থায়ী বাহক’ নামে পরিচিত এই ব্যক্তিরা বছরের পর বছর ধরে অজান্তেই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দিতে পারেন ও অন্যদের সংক্রামিত করতে পারেন। তাঁরা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে টাইফয়েড সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলেন। শিশুরা যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, জীবাণু-বাহকের তৈরি খাবার খায় অথবা স্কুলের মতো জায়গায় দীর্ঘস্থায়ী বাহকের পরোক্ষ সংস্পর্শে আসে- তাহলে তারা এই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

টাইফয়েডের লক্ষণগুলি কী কী?

  • ক্রমশ জ্বর বৃদ্ধি পাওয়া, যা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে
  • অলসতা বা নিস্তেজ ভাব
  • বমি, পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য
  • কাশি
  • বিরল কিছু ক্ষেত্রে বুকে হালকা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে

যদি আপনার শিশুর মধ্যে এই লক্ষণগুলির কোনওটি দেখতে পান, তাহলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে টাইফয়েড দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

টাইফয়েড কি এক শিশু থেকে অন্য শিশুর মধ্যে ছড়াতে পারে?

টাইফয়েড অন্যান্য বেশিরভাগ সংক্রমণের মতো নয়, তা সরাসরি বা ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় না। তবে, এটি পরোক্ষ সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও সংক্রামিত শিশু শৌচাগারে যায় এবং তারপর হাত না ধুয়ে তার ভাইবোনদের সংস্পর্শে আসে, অথবা যদি তাদের মুখে হাত দেয়, অথবা হাত না ধুয়ে খাবার খায়, তাহলে তাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে।

টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায় কী?

আপনার শিশুকে টাইফয়েডের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য আপনি কয়েকটি সহজ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমন:

  • নিয়মিত হাত ধোয়া, বিশেষ করে রান্না করার আগে, খাবার পরিবেশন করার আগে বা খাওয়ার আগে।
  • শৌচাগার ব্যবহারের পরে শিশুদের সর্বদা হাত ধোয়া শেখান।
  • অপরিশোধিত জল পান করা এড়িয়ে চলতে শেখান। শুধুমাত্র পরিশোধিত বা ফোটানো জল পান করতে হবে।
  • আপনার ফল এবং শাকসবজি সঠিকভাবে ধুয়ে নিন এবং সমস্ত খাবার ভালোভাবে রান্না করুন।
  • যদি তারা বাইরে খায়, তাহলে কাঁচা খাবার যেন না খায়। খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয় এমন ফলই যেন খায় যেমন কমলা বা কলা, অথবা টাটকা তৈরি করা ও গরম পরিবেশন করা খাবার খেতে হবে।
  • তাদের দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার পান করা এড়িয়ে চলতে শেখান যাতে তারা ভুলবশত পাস্তুরিত না করা দুধ গ্রহণ না করে।
  • টিকা নেওয়ার কথা বিবেচনা করুন কারণ এটি তাদের রোগ থেকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায়।

টাইফয়েড টিকা কীভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারকে রক্ষা করতে পারে?

টাইফয়েড থেকে সুরক্ষিত থাকার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল টিকা। টাইফয়েড থেকে সেরে ওঠা রোগীদেরও পুনরায় রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রাকৃতিক সংক্রমণ টাইফয়েডের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী এবং পর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে না। টাইফয়েড থেকে রক্ষা পেতে, এমনকি যদি আপনার ইতিমধ্যেই সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাও টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি আপনাকে দীর্ঘস্থায়ী বাহকদের থেকেও সুরক্ষিত রাখে এবং স্থানীয় সমাজকে প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। টাইফয়েড আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ হওয়ার ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পরে টিকা দেওয়া উচিত।

উপসংহার

টাইফয়েড একটি গুরুতর কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ যা দূষিত খাবার এবং জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি কী ভাবে ছড়ায়-তা বোঝার মাধ্যমে এবং উত্তম স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন, নিরাপদ খাবার এবং জল গ্রহণ এবং টিকা নেওয়ার মতো সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাবা-মায়েরা তাঁদের শিশুদের সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারেন। যেহেতু টাইফয়েড দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী বাহকরা অজান্তেই ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারেন। ফলে, সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। টাইফয়েড এবং এর পুনরাবৃত্তি থেকে রক্ষা করার জন্য টিকাদানই সবচেয়ে কার্যকর উপায়, যা আপনার প্রিয়জনদের জন্য এক স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে।

সম্পর্কিত তথ্য পড়ুন

Frame 2055245448 (1)
প্রতিষেধক কী ভাবে টাইফয়েড প্রতিরোধে সাহায্য করে?
সম্পর্কিত প্রবন্ধ পড়ুন
Rectangle 61 (1)
রাস্তার খাবার থেকে কি আপনার টাইফয়েড হতে পারে?
সম্পর্কিত প্রবন্ধ পড়ুন
Frame 2055245448 (5)
টাইফয়েড কীভাবে ছড়ায় এবং প্রতিটি অভিভাবকের যা জানা উচিত
সম্পর্কিত প্রবন্ধ পড়ুন

তথ্যসূত্রাবলী

দাবিত্যাগ: ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের একটি জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ। এই ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি। এটিকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। এখানে প্রদর্শিত চিকিৎসক, চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং গ্রাফিক্স শুধুমাত্র চিত্রণমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। আপনার অবস্থা সম্পর্কে যে কোনও চিকিৎসা পরামর্শ বা প্রশ্ন বা উদ্বেগের জন্য আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

Scroll to Top
This site is registered on wpml.org as a development site. Switch to a production site key to remove this banner.