ভ্রমণের সময় টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কী ভাবে হ্রাস করবেন

ভারতে টাইফয়েড এখনও জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। ২০২৩ সালে দেশে ৫ লক্ষেরও বেশি টাইফয়েডের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে, আগের তুলনায় যেহেতু অনেক বেশি ভারতীয় বিদেশে (এবং এমনকি দেশের ভিতরেও) ভ্রমণ করছেন, তাই টাইফয়েডের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পরবর্তী ভ্রমণের আগে এবং সফরকালে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করলে আপনি নিরাপদ থাকতে পারেন।
টাইফয়েড কী?
টাইফয়েড সালমোনেলা টাইফি নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এটি দূষিত খাবার এবং জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা এবং তীব্র পেট ব্যথা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতের মতো দক্ষিণ এশীয়ার দেশগুলিতে টাইফয়েডকে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি প্রধান উদ্বেগ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এই রোগের বিস্তারে সাহায্য করে।
ভ্রমণের সময় টাইফয়েড থেকে কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
টাইফয়েড থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আপনি তিনটি সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারেন:
- ওয়াশ (জল, পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধি) নিয়মাবালী অনুসরণ করুন
- আপনার খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন
- ভ্রমণের আগে টাইফয়েডের টিকা নিন
1. ওয়াশ নিয়মাবলী
ভ্রমণের সময় নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা অপরিহার্য। ঘন ঘন সাবান ও জল দিয়ে হাত ধুয়ে নিন, বিশেষ করে শৌচাগার ব্যবহারের পরে এবং খাবার খাওয়ার আগে। যদি সাবান ও জল না পাওয়া যায়, তাহলে আপনি ৬০% পর্যন্ত অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে পারেন।
2. নিরাপদ খাদ্য বেছে নেওয়া
- সালাদ-সহ কাঁচা বা কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলুন।
- বুফে বিকল্পের চেয়ে গরম, তাজা রান্না করা খাবার বেছে নিন।
- শোধন না করা জল এড়িয়ে চলুন এবং জলের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে সিদ্ধ বা বোতলজাত জল পান করুন।
- পানীয়তে বরফের টুকরো ব্যবহার করবেন না, যদি না আপনি নিশ্চিত হন যে সেগুলি পরিশোধিত জল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পরিবর্তে গরম পানীয়, স্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি ফলের রস বা প্যাকেটজাত পানীয় বেছে নিন।
- পাস্তুরিত না করা দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য বা কম রান্না করা ডিম এড়িয়ে চলুন।
- খোসা ছাড়ানো যায় এমন ফল খান যেমন কলা বা কমলা অথবা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা যায় এমন ফল বেছে নিন।
3. টাইফয়েড রুখতে টিকা নিন
টাইফয়েডের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম প্রতিরোধ হল টিকা। দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিভিসি) প্রদানের সুপারিশ করে। টাইপবার-টিসিভি হল বিশ্বের প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্ব-যোগ্যতাপ্রাপ্ত টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন। টিকা নেওয়ার জন্য ভ্রমণের তারিখের কমপক্ষে দুই মাস আগে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
টিকা কি সত্যিই প্রয়োজনীয়?
এমনকি সবচেয়ে সতর্ক ভ্রমণকারীদেরও টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। টিকা শুধু সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় না বরং এর বিস্তার সীমিত করতেও সাহায্য করে। যেহেতু প্রাকৃতিক সংক্রমণ স্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে না, তাই টাইফয়েড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিরাও দুর্বল থাকেন এবং তাঁদেরও টিকা প্রয়োজন।
উপসংহার
টাইফয়েড একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, তবে এটি ভারতে তথা সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। আপনি দেশের মধ্যে বা বিদেশে যেখানেই ভ্রমণ করুন না কেন, সঠিক সতর্কতা অবলম্বনই আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। উত্তম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খাবার বেছে নেওয়া এবং টিকা নেওয়া হল নিজেকে এবং আপনার চারপাশের লোকেদের রক্ষা করার সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়। টাইফয়েড যেন আপনার ভ্রমণ ব্যাহত করতে না পারে। আগে থেকে পরিকল্পনা করুন, সতর্ক থাকুন এবং উদ্বেগমুক্ত ভ্রমণ নিশ্চিত করতে আপনার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন।
তথ্যসূত্রাবলী
দাবিত্যাগ: ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের একটি জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ। এই ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি। এটিকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। এখানে প্রদর্শিত চিকিৎসক, চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং গ্রাফিক্স শুধুমাত্র চিত্রণমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। আপনার অবস্থা সম্পর্কে যে কোনও চিকিৎসা পরামর্শ বা প্রশ্ন বা উদ্বেগের জন্য আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।